অল্প চালানে কম্পিউটার দোকান এবং ফটোকপি লাভজনক ব্যবসা করার টিপস

আপনি যদি অল্প ইনভেস্টমেন্ট করে লং টাইম ইনকাম করতে চান তাহলে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

আমি নিজে এই ব্যবসা করি আর সেইখান থেকে আজকের কম্পিউটার দোকান ও ফটোকপির লাভজনক ব্যবসা করার সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
এই ব্যবসা সম্পুর্ন নির্ভর করবে আপনার উপর এবং আপনার এক্সপেরিয়ান্স এর উপর। সবচেয়ে মজার ব্যাপার আপনার ব্যবসার মার্কেটিং করবে আপনার আসে পাসের মানুষ। আমি এ বিষয়ে সকল কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করবো আপনি যদি সত্যিই ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করবেন।

কম্পিউটার দোকান শুরু করার আগে চিন্তা ভাবনা

প্রথমেই বলে নেই এই ব্যবসায় কম্পিটিশন দেখে লাভ নেই। দেখতে হবে নিজের দক্ষতা কতটুকু জানি আমি প্রযুক্তি বিষয়ে। আমি কি সকল কাজ করতে পারবো অথবা কোন কাস্টোমার যেকোন কাজ নিয়ে আসলো সেটা কি আমি তার পছন্দমত করতে পারবো কিনা। এগুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করুন যদি মনে করেন হ্যা যেকোনো কাজ দেখা মাত্রই আমাকে দারা সম্ভব। তাহলে আমার মতে এই ব্যবসা আপনার জন্য পারফেক্ট হবে। আর যদি মনে করেন না আমি পারবো না কিন্তু এই ব্যবসা করার অনেক ইচ্ছে, সেক্ষেত্রে ভালো কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কোর্স করে নিবেন।

কম্পিউটার ও ফটোকপির ব্যবসায় লাভলছ

এ ব্যবসায় ইনভেস্টমেন্ট নাই বললেই চলে তবে শুরুতে কিছু বিনিয়োগ করতেই হবে আর নিজেস্ব একটি কম্পিউটার থাকলে তো কথায় নেই। একটি প্রিন্টার আরেকটি ফটোকপি মেশিন তবে ফটোকপি মেশিন কখনই পুরাতন দিয়ে শুরু কবেন না। আর এই ভুল কখনোই করতে যাবেন না ফটোকপি পুরোনো মেশিন যে যত কথাই বলুক না কেন কখনোই ভালো হবে না কেননা সেই মেশিন টা বাদ দিয়েছে কেন কারণ ঐটার সমস্যা আছে বিদায় কেউ একজন সেটা বিক্রি করে দিয়েছে। সব কিছু নতুন কিনে নিয়ে এ ব্যবসা শুরু করাই উত্তম হবে বলে আমাদের মতামত।

কম্পিউটার দোকান দিতে হলে কি কি জানা থাকতেই হবে।

১। মাইক্রোসফট অফিস ওয়ার্ড, এক্সেল, আমি আমার চার বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। এই পর্যন্ত অফিসিয়াল যে কোন কাজের জন্য এই দুইটার বেশি কখনোই লাগে নাই। ছো আপনি সবকিছু বাদ দিয়ে অফিসিয়াল কাজের জন্য এই দুইটার পিছনে সময় দিন।

২। টাইপঃ টাইপ স্পিড যত হয় তত ভালো তবে ব্যবসা শুরুর ক্ষেতে মিনিমাম ২০ ওয়ার্ড করে বাংলা ও ইংরেজি টাইপিং এর দক্ষ থাকতে হবে এতে যেকোনো টাইপিং এর কাজ দ্রুততার সাথে শেষ করতে পারবেন।

৩। ফটোশপঃ এই বিষয়ে ৮০% দক্ষতা থাকতেই হবে কেননা কম্পিউটার দোকানে ছবি সহ অনেক অফিসিয়াল কাগজ পত্রাদি ফটোশপের মাধ্যমে ঠিক করতে হয়। কখোন কোন কাজ আসবে বলা মুসকিল তাই এই বিষয় জানা জরুরী।

৪। ইন্টারনেটঃ আসলে এখানে জানার শেষ নেই তবে ব্রাউজিং এর ক্ষেত্রে ১০০% নলেজ থাকতেই হবে। কেউ বলা মাত্র আপনি যেন খুব সহজেই সে তথ্য বের করতে পারেন। এবং অনলাইনের কাজ গুলো সঠিকভাবে সম্পুর্ন করতে পারেন।

৫। ফরমেট বা ফাইলঃ যে কোন ফাইল দেখা মাত্রই বুঝে নিতে হবে এটা কোন কোন ফাইল বা কি ফরমেটে করা। যেমনঃ pdf, psd, doc, Excel, png, jpg, ফরমেট দেখা মাত্রই বুঝে নিতে হবে। এবং এগুলো এডিট করা শিখতে হবে। এছাড়াও এগুলোকে কনভার্ট করে অন্য ফরমেটে নেওয়া শিখতে হবে। যেমনঃ পিডিফ থেকে ওয়ার্ডে, ওয়ার্ড থেকে পিডিএফ এ, ডগ থেকে পিডিএফ এ কনভার্ট করা এসব সকল বিষয় জানা থাকতে হবে। আর এই সব অনলাইনের মাধ্যমে সহজেই করা যায় জাস্ট টেকনিক টা জানা থাকতে হবে। আর এইসব কখনো কাস্টমারকে বুঝতে দেওয়া যাবে না। কারণ এইসব কাজ করে দুই চারটি ক্লিক করে একটা প্রিন্ট কপি বের করে দিয়ে কাস্টমার এর কাছ থেকে ২০/৩০ টাকা নেওয়া যায়।

৬। ইমেইলঃ ইমেইল আদান-প্রদান, ইমেইলে ছবি পাঠানো, যে কোন ফাইল পাঠানো এগুলো বিষয় জানা থাকতেই হবে।

৭। প্রিন্ট করাঃ এগুলো কোন কাজের মধ্যে পড়ে না কিন্তু যারা না জানে তাদের কাছে অনেক কিছু। আমি নিজেও এক সময় ভাবতাম এতো কিছু পারি প্রিন্ট করতে পারি না। যাই বিভিন্ন কাগজে সঠিক মাপে প্রিন্ট করা।
৮। কাগজ চেনাঃ কাগজ দেখেই মাথায় নিয়ে আসতে হবে এটা কোন কাগজে বের করতে হবে।
৯। ফটোকপিঃ এখানে অনেক মাইর প্যাচ আছে এবং নিয়ম কানুন আছে এগুলো নিয়ে সামনে আলোচনা করবো।

১০। নিজের কম্পিউটার নিজে ঠিক করাঃ ছোট্ট একটা সমস্যার কারণে যদি মিস্ত্রির কাছে যেতে হয় তাহলে তো মহা বিপদ, আর মানুষের মুখেও নানান কথা যে সে একজন কম্পিউটার দোকানন্দার কিন্তু নিজের কম্পিউটার নিজে ঠিক করতে পারে না ব্যপার টা কেমনা না।

এক কথায় আপনাকে এইসব বিষয়ে বস হতে হবে এতে অনেক লাভ আর জানেন তো যেকোনো বিষয়ে এক্সপার্ট থাকলে তার আর ভাত মাছের অভাব হয় না।

কম্পিউটার দোকান বা ফটোকপি ব্যবসা শুরু করার পদ্ধতি

১। পজিশনঃ প্রথমেই দোকানের পজিশন নতুন অবস্থায় পজিশন টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে ভালো হয় একটি কোট বা স্কুল কালেজের সামনে এতে দ্রুততার সাথে প্রচার হবে।
২। ডেকরেশনঃ যদিও কম্পিউটার দোকানের ডেকরেশন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। তার পরেও একটু নজর দেওয়া দরকার আর এর উপরে মার্কেটিং এর ব্যপার আছে। আর হ্যা কখনই এই দোকানে ব্রেঞ্চ রাখবেন না কারণ এখানে অনেক ভি আই পি মানুষ আসে যারা কিনা দুইজন একই ব্রেঞ্চ এ বসতে একটু বিরক্ত বোধ করে যেমনঃ একটা স্কুলের হেড মাস্টার আর দপ্তর আসলো। এখন কিন্তু তারা এক সাথে বসতে চাইবে না তাদের নিজেদের কাছেই খারাপ লাগবে। যদিও সবার ক্ষেত্রে সমান নয় তার পরেও সেটা একজন দোকানন্দারকেই বুঝতে হবে। তাই বলছি যায়গা একটু বেশি লাগলেও চেয়ার এর ব্যবস্থা করা ভালো।

৩। ব্যনারঃ কম্পিউটার দোকানের ব্যানার টা অনেক সুন্দর হতে হবে এবং অন্য ব্যবসার চেয়ে আনকমন হতেই হবে। বুঝতাছেন না প্রযুক্তি নিয়ে ব্যবসা আর আপনি যে গ্রাফিক্স ডিজাইনার ঐ ব্যনারের উপরেও আপনার এক্সপেরিয়ান্স এর অনেক কিছু নির্ভর করবে। কেউ জেন দেখে না বলতে পারে সে একজন কম্পিউটার এক্সপার্ট তার ব্যনারের এই অবস্থা।
৪। ভিজিটিং কার্ডঃ উপরোক্ত বিষয়ের সাথে অনেকটা মিল রেখে এটি তৈরি করতে হবে। এক কথায় কেউ জেন ভুল ধরতে না পারে। একটি কম্পিউটার দোকানের কেমন ভিজিটিং কার্ড দরকার সেটার আর নতুন করে বলার কিছু নেই।

৫। ওয়েবসাইটঃ দোকানের নামে একটি ওয়েবসাইট অনেক গুরুত্বপূর্ণ কেননা আপনার নিজের এক্সপেরিয়ান্স থেকে কিছু লিখা নিয়মিত। এতে অনেকে পড়ে বুঝতে পারবে না আসলে সে একজন কম্পিউটার দক্ষ ব্যক্তি। আর ওয়েবসাইট লাগলে আমাদের থেকেই নিতে পারবেন।

৬। ব্যবহারঃ একটি ব্যবসার ৫০% নির্ভর করে তার ব্যবহারের উপর। আপনি যে একজন প্রযুক্তিবিদ সেটা জেন সবাই বুঝতে পারে। প্রযুক্তি ক্যাল কথা বার্তা ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে এতো বুঝতে জাবেন না বা মানুষের সাথে বেশি কথা বলার দরকার নেই।

৭। ট্রেড লাইসেন্সঃ আপনি একজন দক্ষ প্রযুক্তিবিদ হয়ে এসব ভুল কখনই করবেন না দোকানের কাগজ পাতি আর কম্পিউটার দোকানের ট্রেড লাইসেন্স মাত্র ৩০০ টাকা। এজন্য যে নেওয়া বাদ দিবেন। এ রকম ভুল কখনই করবেন না।

কম্পিউটার দোকান ও ফটোকপি ব্যবসার নাম

এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার উপর তবে এইসব ক্ষেত্রে ছোট নাম ব্যবহার করা উত্তম। এতে সহজে মানুষের মুখে মুখে প্রকাশ পায় আমি নিম্নে কিছু উদাহরন দিয়ে দিচ্ছি যা সুধু একটু পরিবর্তন করে নিজের নামে করে নিলেই হবে।
১। রাজু কম্পিউটার (নিজের নামে করা পারফেক্ট এটা প্রচার হয় দ্রুত )
২। রাজু কম্পিউটার এন্ড ফটোকপি
৩। কম্পিউটার জোন
৪। রাজু ডিজিটাল কম্পিউটার এন্ড ফটোকপি বা ফটোষ্ট্যট
৫। টেক কম্পিউটার
এ ধরনের নাম ব্যবহার করলে দ্রুত প্রচার হবে আর বেশিরভাগ এই সব ব্যবসায় দেখা যায়। অন্য নাম দিলেও সেটা মার্কেট পায় না যার দোকান তার নাম সাথে কম্পিউটার এটাই মূলত মানুষের মুখে মুখে হয়ে যায়। ধরুন আপনার দোকানে একজন কাস্টোমার আসলো এখন কেউ একজন তাকে ফোন করে বললো কোথায় আপনি তখন সে বলবে রাজু কম্পিউটার এ বাকি টুকু কিন্তু বলবেই না। আর এভাবেই মার্কেটিং হবে।

একটি কম্পিউটার ও ফটোকপির দোকানে কি কি কাজ হয়

১। কম্পোজ
২। ফটোকপি
৩। ইমেইল
৪। প্রত্যয়ন পত্র কম্পোজ
৫। ছবি
৬। প্রস্ন কম্পোজ
৭। অনলাইনে চাকুরীর আবেদন
৮। স্কুল কলেজের বোর্ডের কাজ
৯। ভোটার আইডি কার্ড এবং নতুন ভোটার হউয়ার জন্যাবেদন
১০। সিভি তৈরী
১১। স্ট্যম্প কম্পোজ
১২। চেয়ারম্যান এর প্রায় সকল প্রকার সার্টিফিকেট
১৩। চিঠি লিখা

কম্পিউটার দোকান ও ফটোকপি ব্যবসায় লাভবান হউয়ার উপায়

আমি শুরুতেই বলেছি যদি স্কিল নিয়ে মাঠে নামেন তাহলে কম্পিটিশন দেখতে হবে না। আপনার শুরুতে টার্গেট থাকবে যেমন ধরুন প্রথম দিন ১ জনের কাজ করে দিলেন তার মনের মত করে। এরপরের দিন আরো দুই চার জনের করলেন কিন্তু সবার জেন মনের এবং চাহিদা মতো কাজ হয় এভাবে কিছুদিন চলার পর দেখবেন ঐ যে প্রথম দিকে যাদের কাজ করছেন তারা আবার নতুন করে কাজ বাজলেই আসতেছে কি না। যদি আসে ভাববেন লেগে গেছে আপনি আর ঠকবেন না। আর এখন এরাই আপনার প্রচার করবে কেউ যদি কম্পিউটার বিষায়ক কাজ নিয়ে তাদের কে জিগায় তারা সরাসরি রাজু কম্পিউটার মানে আপনার দোকানকেই দেখিয়ে দিবে আমি শিওর। আর যে লোককে দেখিয়ে দিলো তাকে যদি ভালো সার্ভিস দিতে পারেন তাহলে আপনার প্রসংসার আর শেষ হবে না এভাবে দীন দীন বারতেই থাকবে।

নিজ জ্ঞ্যান এবং রিলেটেড কিছু কম্পিউটার এবং ফটোকপি ব্যবসায়ীর অভিজ্ঞতা থেকে লেখা আসা করি অনেক আইডিয়া পেয়েছেন যদি ভালো লাগে তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন এবং যদি ওয়েবসাইট বানানোর কথা চিন্তা করেন তাহলে আমাদের থেকে ডোমেইন হোস্টিং সার্ভিস নিতে পারবেন।

7 thoughts on “অল্প চালানে কম্পিউটার দোকান এবং ফটোকপি লাভজনক ব্যবসা করার টিপস”

  1. অনেক ভালো লাগলো, আপনার প্রত্যেকটি কথা।
    ধন্যবাদ আপনাকে।
    আপনাদের মোবাইল দেওয়া যাবে।

    Reply
  2. আমি একটি পৌরসভায় থাকি। আমি লাইসেন্স নিবো কোথা থেকে??

    Reply

Leave a Comment