গরুর খামার পরিকল্পনা ও কার্যকরী বাস্তবায়ন

বাংলাদেশ হলো কৃষিপ্রধান একটি দেশ এবং আমাদের দেশের আয়ের অধিকাংশ টাই আসে কৃষির মাধ্যমে। তাছাড়া বাংলাদেশের কর্মসংস্থানের বড় একটি খাত ও হলো কৃষি। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের জনগণের বিশাল একটি অংশ কৃষির উপর নির্ভরশীল। আর এখন বর্তমানে গরুর খামার থেকেও কৃষিখাতে আয়ের অনেকটা অংশ যোগ হচ্ছে।আর এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে অনেক।তাছাড়া এটি আমাদের দেশে পুষ্টিমানের চাহিদাও অনেক পূরণ করে থাকে। গরুর দুধে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং জিংক এর মত উপাদান। তাই আজকে আমি আপনাদেরকে বলবো গরুর খামার পরিকল্পনা নিয়ে।

গরুর খামার করার নিয়ম

সভ্যতার শুরু থেকে পশু পালন ছিলো মানুষের প্রধান পেশা। যুগে যুগে এ ব্যবসার প্রসার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারা পৃথিবীতে পশুর খামার ব্যবসা একটি উৎপাদনশীল এবং লাভ জনক ব্যবসা। গরুর খামার করতে হলে আপনাকে অবস্যয় মাথায় রাখতে হবে।  আপনার যথা সম্ভব ভালো কোন ছায়া বা পাশে কোন পুকুর আছে এমন স্থানে, খামার করার পরিকল্পনা করতে হবে। ভালো মাপের খামার করতে হলে আপনাকে অবস্যয় কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ টি প্রথমে খামারে গরু পালন করতে হবে। তার পরে আপনার খামার শুরু করতে হবে। আপনাকে আধুনিক  বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আর তখন ই আপনার খামার সাস্টেইনেবল হবে। যখন আপনি সনাতন পদ্ধতিতে গাভীর দুধ দোয়াতে যাবেন তখন একটার পরে একটা গাভী দোয়ানোর সময়, গাভীর ওলানে ইন্জুরি হওয়ার সম্ভবনা থাকে।  আর তখন গাভীর অর্ধেক দুধ কমে যাবে। এ জন্যে রোবটিক সিস্টেম এ দুধ দোয়ানোর ব্যাবস্থা করলে, আপনি পরিপূর্ণ দুধ পাবেন। শ্রমিকের পরিমাণ কমে আসবে নিরাপদ ও জীবানু মুক্ত দুধ পাবেন। তা ছাড়া আপনার গাভী কে সহসেই সুন্দর ভাবে ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে পারবেন।  খামারে যত মানুষের সংখ্যা কম হবে ততই জীবাণুমুক্ত খামার ভালো হবে। এতে করে আপনার খামার পরিস্কার ও জীবাণুমুক্ত হবে। আপনি সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ টি গরু নিয়ে আলাদা একটি খামার স্থাপন করতে পারেন। আর সাধারনত এতে করে কি হবে সারাদেশের বেকারদের মধ্যে কিছু বেকারের হলেও কর্মসংস্থান হবে এর মাধ্যমে। সাধারণত এর মাধ্যমে মানুষ দুধ পাবে, মাংস পাবে এবং এর গোবর থেকে সার তৈরি করতে পারবে। আর সাধারনত এই মডেলটি তখন ভালো একটি মডেল হিসেবে কাজ করবে।

গরুর খামার করতে কতো টাকা খরচ হবে

সাধারণত এটা নির্ভর করে আপনি কয়টা গরু নিয়ে খামার প্রস্তুত করবেন এবং আপনি খামার ছোট আকারে তৈরি করবেন নাকি মাঝারি আকারে।আপনি যদি ৫০ থেকে ২০০ টি গরু নিয়ে খামার করার পরিকল্পনা করেন তাহলে আপনার এ ক্ষেত্রে খুব বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে না। সাধারণত এখন বর্তমানে যদি লাখ দশেক টাকা থাকে তাহলে যে কেউ একটি খামার তৈরি করতে পারবে। তবে আমরা অনেকেই আছি যারা কিছু ভুল কাজ করে থাকি যেমন গরুর ঘর বানাতে গিয়ে দেখা যায় কেউ কেউ ২০ লাখ টাকারও বেশি খরচ করে ফেলেছি।

আচ্ছা আপনি একটু পিছনে ফিরে চলে যান দেখুন এক সময় এই প্রাণীরা বসবাস করত জঙ্গলে।কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এসব পশুদের বাসস্থানের  অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এরা এখন বসবাস করছেন বসতবাড়িতে। আবার কেউ কেউ গবাদি পশুদের জন্য ইটের তৈরি দালানও তৈরি করছে। কিন্তু এটা ঠিক নয় পশুদের খোলা স্থানে থাকতে দেওয়া উচিত। গরুর এমন স্থানে রাখতে হবে যাতে ঝড় বৃষ্টি হলে তাদের গায়ের বৃষ্টির পানির না পড়ে এবং চারিদিক থেকে যেন সুস্থ বাতাস পায় তারা তাহলে তাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। তাহলে কি করা যাবে?সেই জন্য শুধু গরু কোথাকার জায়গাটাই উপরে কিছু একটা দিয়ে কভার করলেই হবে। যাতে যখন ঝড় বৃষ্টি হয় তার পানিটা যেন সরাসরি গরুর গায়ে না পড়ে সেই জন্য। তাহলে কি হবে বাতাসটা তারা সঠিকভাবে পাবে সেলিম বৃষ্টির পানির স্বাদ কিছুটা তাদের গায়ে লাগলে তেমন কোন ক্ষতি হবে না।

আর সাধারনত এই জন্য তাদের শরীর পরিষ্কার থাকবে তারা ঠিকমতো বাতাস পাবে এবং এতে করে এদের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে। তবে সাধারনত এখানে একটি সমস্যা রয়েছে সেটি হলো মশার সমস্যা,আর এর সমাধানও এখন রয়েছে কেননা বাজারে এখন অনেক ধরনের গরুর নেট পাওয়া যায় যা গরুর ঘরের চারপাশে লাগিয়ে দিলে মশার সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে। আর তাহলে সহজেই আপনি গরু পালন করতে পারবেন। সাধারণত একজন শক্ত সামর্থ যুবক দশ লাখ টাকা পুজি নিয়ে খুবই ভালভাবে গরুর খামার করার ব্যবসা করতে পারেন।

তাছাড়া অন্য ক্ষেত্রে, একলক্ষ  টাকা থেকে এককোটি টাকা এবং আরো বেশি। আপনি যদি নিজের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ঘাস চাষের জমি থাকে, একটা ছোট গরুর ঘর থাকে। যদি চাষাবাদের জমি থেকে কিছু খেড়-কুটা আসে আর আপনার বাড়ি যদি গ্রামে হয়। ৭৫ থেকে ৯০ হাজার টাকা দিয়ে ২টি মাদি বছুর কিনে খামার আরম্ভ করতে পারেন।

আর আপনি যদি ৪টি দুধ ওয়ালা গাভি দিয়ে আরম্ভ করতে চান তাহলে আপনাকে,

গাভীর দাম= ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা। অন্যান্ন খরচ= ২ লক্ষ টাকা   মোট= ৯ থেকে ১০ লক্ষ টাকা

আর আপনি যদি বড় মাপের খামার করতে চান তাহলে ৯ থেকে ১০ লক্ষ টাকা আপনার খামার করতেই খরচ হবে।

মোট কথা খামার করতে কতো টাকা খরচ হবে তা নির্ভর করে

১. গরু ও গাভীর সংখ্যা আয়তনের উপর।

২. খামার বা ঘাস চাষের জমি লিজ কী নিজের তার উপর।

৩. অন্যকে দিয়ে নয় নিজেই নিজের খামার দেখা শোনা করবেন।

৪. যোগাযোগ ব্যাবস্থা।

৫. গরু বা গাভীর সহজ প্রাপ্যতা।

৬. কাঁচা মালের সহজ প্রাপ্যতা।

৭. ফ্রিভারে গরু চড়ানোর ব্যাবস্থা আছে কী না।

৮. আরো অন্যান্ন বিষয়ের উপর।

গরুর খামারে লাভ কেমন

প্রতিটি গাভী দিনে ১০লিটার দুধ দেয়। প্রতি লিটারের দাম ৫০ টাকা একটি গাভী থেকে একদিনে দুধ পাওয়া যাবে ১০লিটার ১০×৫০= ৫০০টাকা। তাহলে ৯টি গাভী থেকে প্রতিদিন দুধ পাওয়া যাবে ৯০×৫০= ৪৫০০ টাকা ১দিনে আয় হবে। ফলে ৯টি গরুর দুধ বেচে ৩০ দিনে আয় হবে ৪৫০০×৩০= ১,৩৫,০০০ টাকা মাসে আয় হবে। গাভী সাত মাসের বেশি দুধ দিবে ১০লিটার করে। তারপরে দুধের পরিমান কমতে থাকবে। দুধ বিক্রি থেকে সাত মাসের আয় ১,৩৫,০০০×৭= ৯,৪৫,০০০ টাকা।

৭ মাস পরে দুধ দেওয়ার পরিমান কমে যাবে। তখন একটি গাভী ৫লিটারে নেমে আসবে। তাহলে ৯টি গাভী ৪৫ লিটার দুধ দিবে। ৫০ টাকা লিটার বিক্রি করলে ৫০×৪৫= ২,২৫০ টাকা। তাহলে আগের ৭ মাসের আয় ৯,৪৫,০০০ আর পরে ২ মাসের আয় ২,২৫০

মোট দুধ বিক্রি টাকা =৯,৪৫,০০০+২,২৫০= ৯,৪৭,২৫০ টাকা

একটি পারিবারিক গাভীর খামার স্থাপন করতে বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। বাড়ির ভিতরে একটি আধা -পাকা শেড তৈরী করলেই চলে। গাভীর খামার স্থাপনের তেমন কোন ঝুকি নাই। প্রয়োজনে দেশি লাগানো ঘাস খাওয়ালে ও চলে। অল্প পঁজি দিয়ে খামার স্থাপন করা চলে। একটি পারিবারিক খামার দেখা শোনার জন্যে আলাদা কোন মানুষের প্রয়োজন পড়ে না।

Leave a Comment